রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কেয়ামত দিবসের ব্যতিক্রমী আট সাক্ষী

মুফতি আইয়ুব নাদীম:
কেয়ামত দিবসের বিভীষিকাময় অবস্থার কথা কে না জানে। সেদিন প্রত্যেকে এমন দিশেহারা হবে যে, সবাই তার আপনজন ও অর্থ-সম্পদের কথা ভুলে যাবে। এমনকি পশুরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। সেদিন এসব ভীতিকর জিনিসের সঙ্গে আরও একটি ভীতিকর বিষয় হলো আমাদের পার্থিব জীবনের কাজের ব্যতিক্রমী সব সাক্ষী।

সেদিন এমন আট সাক্ষী উপস্থিত হবে, যা অস্বীকারের কোনো উপায় ও সুযোগ থাকবে না। সেই আট সাক্ষী নিয়ে কোরআন-হাদিসের আলোকে আলোচনা তুলে ধরা হলো

স্থান বা জায়গা : শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, পরিবেশের তাড়নায়, কমবেশি সবাই গোনাহ করে থাকে। গোনাহ যে স্থানে করা হয়, কাল কেয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে জমিনের ওই অংশ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন পৃথিবীর তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে।’ সুরা জিলজাল : ৪

সময় : সকাল দুপুর বিকেল তথা রাত-দিনের কোনো না কোনো সময়ই গোনাহের ওই কাজটি করা হয়ে থাকে। কাল কেয়ামতের দিন, সময়ের ওই অংশটুকু আল্লাহর দরবারে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতিটি দিন মানুষকে ডেকে বলে, আমি নতুন দিন, আমার ভেতর যে গোনাহ যেরকম কাজ করা হবে, কেয়ামতের দিন আমি তার জন্য সেরকম সাক্ষী দেব।’ কুরতুবি : ১৯/২৪৫

জিহ্বা : মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি মানুষের এক ক্ষুদ্রাকায় অঙ্গ জিহ্বা। জিহ্বা আকারে ছোট হলেও এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া অনেক বড়। জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব, অভিব্যক্তি ও কামনা-বাসনা আদান-প্রদান করে। ভাব প্রকাশের এ মাধ্যমটিকে সত্য-সঠিক ও কল্যাণকর ক্ষেত্রে ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। এর বিপরীতে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জিহ্বা ব্যবহার করা মারাত্মকতম গোনাহ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ত্যাগ করা।’ জামে তিরমিজি : ২৩১৭

জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ যেসব গোনাহ করে, কাল কেয়ামতের ময়দানে জিহ্বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, হাত ও তাদের পা সাক্ষ্য দেবে।’ সুরা নুর : ২৪

শরীরের অন্যান্য অঙ্গ : শরীরের মধ্যে আরও যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, নির্দিষ্ট ওই অঙ্গ দ্বারা যে গোনাহ করা হয়েছে, শরীরের ওই অঙ্গ কাল কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। ফলে তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’ সুরা ইয়াসিন : ৫৫

বর্ণিত আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মানুষ যখন তার কৃতকর্মের কথা অস্বীকার করবে, তখন আল্লাহ মানুষের হাত-পায়ে বাকশক্তি দান করবেন, তখন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদের দ্বারা কৃত গোনাহের কথা সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে।

দুই ফেরেশতা : মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভালোমন্দ, নেককাজ ও বদ আমল লেখার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দুজন ফেরেশতা প্রতিটি মানুষের জন্য নিয়োজিত। তারা মানুষের কৃত সব কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। তারা কাল কেয়ামতের দিনে গোনাহগার ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অথচ তোমাদের জন্য কিছু তত্ত্বাবধায়ক (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ, যারা জানে তোমরা যা করো।’ সুরা ইনফিতার : ১১-১২

মানুষের আমলনামা : কেয়ামতের ময়দানে মানুষের আমলনামা তার কৃতগোনাহের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে। ইরশাদ হয়েছে, “আর ‘আমলনামা’ সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদের দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলেছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, ছোট-বড় যত কর্ম আছে সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সব কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে, তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি কোনো জুলুম করবেন না।’ সুরা কাহফ : ৪৯

নবী মুহম্মদ : নবী মুহম্মদ (সা.) কেয়ামতের উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘প্রতি জুমার রাতে সব নবী-রাসুলের কাছে তাদের জাতির (এবং) পিতা-মাতার কবরে তাদের সন্তানদের আমল দেখানো হয়।’ কানজুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল : ৪৫৪৯৩

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?’ সুরা নিসা : ৪১

বর্ণিত আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক নবী-রাসুল নিজ-নিজ উম্মতের ভালোমন্দ কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন। সেই ধারায় নবী কারিম (সা.)-কে তার নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষীরূপে পেশ করা হবে।

আল্লাহতায়ালা : স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বান্দার ভালোমন্দ কর্ম সম্পর্কে কাল কেয়ামতের ময়দানে সাক্ষ্য দেবেন। আল্লাহ বলেন, আমি রহমান, রহিম, গাফফার, সাত্তার, তথাপি কাল কেয়ামতের ময়দানে তোমাদের গোনাহ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেব। আল্লাহ আরও বলেন, তোমরা এটা ভয় করো যে, অমুক দেখছে, অমুক দেখছে, তবে এটা কেন ভয় করো না, খেয়াল করো না, স্বয়ং আমি আল্লাহ নিজেই তো দেখছি। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে মানুষ!) তোমরা যে কাজই করো, তোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাকো, তখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অণু-পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট এবং তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেই।’ সুরা ইউনুস : ৬১

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION